বিশেষ প্রতিনিধি, বিশেষ প্রতিনিধি।।
পারমাণবিক ইস্যুতে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনার মধ্যেই তেহরানে সামরিক পদক্ষেপের কথা ভাবছে ইসরাইল। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়াই ইসরাইল ইরানে হামলার বিষয়টি বিবেচনা করছে। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) বিষয়টির সঙ্গে জড়িত পাঁচজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পারমাণবিক ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে আলোচনা একটি প্রাথমিক বা কাঠামোগত চুক্তির কাছাকাছি আসার সঙ্গে সঙ্গে ইসরাইল ইরানের ওপর একতরফাভাবে হামলার বিষয়টি গুরুত্বভাবে নিচ্ছে। চুক্তিতে ইউরেনিয়াম ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করার প্রস্তাব রয়েছে। যদিও এটাকে ইসরাইল অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করছে।
এনবিসি বলছে, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলের একতরফা হামলা বা যেকোনো পদক্ষেপ ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তেল আবিবের সম্পর্ক নাটকীয় মোড় নিতে পারে।
গত ৩১ মে ইরানকে পরমাণু চুক্তির লিখিত প্রস্তাব দেয় যুক্তরাষ্ট্র। প্রস্তাবে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রধান দাবি, ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। যে দাবি শুরু থেকেই নাকচ করে আসছে তেহরান। যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া প্রস্তাব প্রত্যাখান করে পাল্টা প্রস্তাব দেয়ার কথা জানিয়েছে ইরান।
যদিও ইরানের এই পদক্ষেপের বিষয়ে মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেছেন, ইরান পারমাণবিক আলোচনায় ‘অনেক বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে।
সূত্র জানিয়েছে, গোয়েন্দা সংস্থা বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য প্রত্যক্ষ এবং লজিস্টিক সহায়তার ওপর নির্ভর করে ইসরাইল তেহরানের বিরুদ্ধে একতরফা পদক্ষেপ নিতে পারে।
ইসরাইলের সম্ভাব্য এই পরিকল্পনার কথা যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করা হয়নি বলে পরিচিত সূত্র এবং কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সূত্রগুলো বলছে, আকাশপথে জ্বালানি ভরার মাধ্যমে অথবা গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার করার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে সহায়তা করতে পারে।
এদিকে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাঝুঁকি কারণে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের অপরিহার্য নয়, এমন কর্মী ও তাদের স্বজনদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। এছাড়া বাহরাইন, কুয়েত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে মার্কিন কর্মীদের স্বেচ্ছায় প্রস্থানের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, বুধবার (১১ জুন) মার্কিন কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে যে ইসরাইল ইরানে অভিযান শুরু করতে প্রস্তুত।
কর্মকর্তারা বলছেন, এমন কিছু হলে ইরান ইরাকের কিছু মার্কিন স্থাপনায় প্রতিশোধ নিতে পারে। এছাড়া সম্প্রতি ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা স্থবির হয়ে পড়ায় এ অঞ্চলের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসির মাইকেল নাইটস বলেন, ইরাকে মার্কিন দূতাবাসের অপরিহার্য নয় এমন কর্মীদের সরিয়ে নেয়ার মাধ্যমে তেহরানের কাছে এই বার্তা যাচ্ছে যে, ট্রাম্প ইসরাইলকে ইরানের ওপর সামরিক পদক্ষেপ নিতে বিরত রাখবেন না।
নাইটস এবং বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, ইসরাইল এখন সীমিত আকারে সামরিক হামলা চালাবে নাকি পারমাণবিক আলোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে তা স্পষ্ট নয়।
সাম্প্রতিক পরোক্ষ আলোচনায় ইরানের অবস্থান নিয়ে ট্রাম্প হতাশা প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্প সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা (ইরান) এমন জিনিস চাইছে যা আপনি করতে পারেন না। তারা ইউরেনিয়া সমৃদ্ধকরণ চায়। আমরা এটা করতে দিতে পারি না।’